ছবি : প্রতিনিধি
গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরীর শিমুলতলী এলাকায় চলছে ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প মেলা। মাসব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প এ মেলার আড়ালে রমরমা জুয়ার আসর বসার অভিযোগ উঠেছে।
শিমুলতলীর স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একটি মহল মেলার নামে লোভনীয়, চমকপ্রদ, রাইট দিয়ে অবৈধ র্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ।
এ সব র্যাফেল ড্রয়ে মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাড়ি, মোটরসাইকেল, স্বর্ণ, ল্যাপটপ, টিভি, ফ্রিজ, ডিনারসেটসহ নানা রকম পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাজীপুর মহানগর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার-হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট। ভাগ্য বদলের আশায় অনেক শ্রমজীবীরা বুঝে না বুঝে লোভের মোহনায় পড়ে শত-শত টার র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট ক্রয় করছেন।
এতে করে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে সমাজের নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন একই সঙ্গে সামাজিক ভাবে মূল্য বোধের অবক্ষের শীকার হচ্ছেন।
জানা যায়, গেল বছরের ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখ মহানগরীর শিমুলতলী আর্মি ফার্মা মাঠে দেড় মাসব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা নামে এই মেলা শুরু করা হয়। মেলা আয়োজন করেছেন মেসার্স নাওমি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। মেলার অনুমোদন নিয়েছেন মিঠু নামের এক ব্যাক্তি। মেলা উদ্বোধনের পর দিন থেকেই প্রবেশ টিকিটের নামে কৌশলে শুরু হয়েছে র্যাফেল ড্রয়ের টিকেট বিক্রি। প্রতিদিন ১৬০-৭০ টির মতো অটোরিকশা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা দৈনিক ৫০ লাখ টাকারও বেশি মূল্যের টিকিট বিক্রি করছেন। আর এ সকল টিকিটের মূলক্রেতা হলো সমাজের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ এবং পোশাক কারখানার শ্রমিক। মেলার আয়োজক ও র্যাফেল ড্র সংশ্লিষ্টরা এভাবে প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার মাঠে র্যাফেল ড্রয়ের মঞ্চে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মোটরসাইকেলসহ নানা পুরস্কার। মেলার মাঠে মাইকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এই মঞ্চের সামনে এবং প্রবেশ মুখে টেবিল-চেয়ার পেতে র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি করছেন একাধিক বিক্রেতা। এখান থেকে টিকিট কিনছে শিক্ষার্থী, শিশুসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়াও দেড় শতাধিক গাড়িতে করে টিকিট নিয়ে জেলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে। লটারির পুরুস্কারের লোভে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
স্থানীয়রা জানান, মেলা উদ্বোধনের পর দিন থেকেই শুরু হয় র্যাফেল ড্রয়ের টিকেট বিক্রি। মেলার গেট ছাড়াও শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে ২০ টাকা মূল্যের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অটোরিকশা যোগে ঘুরে ঘুরে টিকিট বিক্রি করছেন মেলার আয়োজকরা। সারাদিন টিকিট বিক্রি শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেলা চত্বরে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এবং তা প্রচার করা হচ্ছে স্থানীয় ডিস চ্যানেল এবং ইউটিউবে। যাতে করে নতুন করে আকৃষ্ট হন অন্যরা।
মোটরসাইকেল-প্রাইভেটকারসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার ঘোষণা করায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন টিকিট কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। রিকশাচালক, দিনমজুর শ্রেণির লোকজন সারাদিনে যা আয় করছেন সেই টাকায় বাড়ির বাজার না করে র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট কিনে বাড়ি ফিরছেন। আবার অনেকেই মোটরসাইকেল পুরস্কার পাওয়ার আশায় লোভ সামলাতে না পেরে অবৈধ এই র্যাফেল ড্রয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে পোশাক শ্রমিক এবং অটোচালকদের বড় একটি অংশ ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন লটারিতে পুরুস্কারের আশায় টিকিট ক্রয় করতে করতে।
সোনালী ব্যাংকে কর্মরত এক কর্মকর্তা স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, আমার মহল্লার প্রতিটি অটোচালক প্রবেশ টিকিটের নামে এই লটারিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। আমার জানা মতে এ পর্যন্ত কয়েকজন বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকার টিকিট কিনেছে। যারা ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ। তিনি বলেন, এই মেলা এ এলাকার মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়ে যাচ্ছে। মেলার প্রভাব বুঝা যাবে যখন মেলা বন্ধ হবে। র্যাফেল ড্রয়ের নামে এই জুয়া এখনই বন্ধ করা না হলে অনেককেই পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলা সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, স্থানীয় সকল প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহীনিকে ম্যানেজ করেই মেলার অবৈধ র্যাফেল ড্র চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন দেড় শতাধিকেরও বেশি গাড়ি দিয়ে জেলার সর্বত্র টিকিট বিক্রি করা হয়। এভাবে টিকিট বিক্রি করার অনুমোদন আছেকিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সকলকে ম্যানেজ করেই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুন বলেন, মেলায় যদি অবৈধভাবে কোন জুয়ার কার্যক্রম চালানো হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কোন অপশন নেই। আপনারা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথেও কথা বলেন।
এসআই
আপনার মতামত লিখুন :